Monday, 22 January 2018

মার্কিন রাজনীতিতে এবার শিশু বীমা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন করে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকার ও বিরোধীদের টানাপড়েনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেশটির সরকারি কর্মকাণ্ড। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে দু'টি ইস্যু। এর একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষা কর্মসূচি ‘ডাকা’ এবং অন্যটি হচ্ছে ‘চিপ’ নামে পরিচিত শিশু বীমা কর্মসূচি।

ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান চাচ্ছে অন্যান্য জিনিসের চেয়ে সামরিক ব্যয় বাড়াতে। তবে সরকারি দলের এই প্রস্তাবে সমর্থন নেই বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটদের। তাদের চাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষা কর্মসূচি ‘ডাকা’র অধীনে যে আট লাখ তরুণ-তরুণী সাময়িকভাবে সে দেশে থাকার অনুমতি পেয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কোনো স্থায়ী সমাধান।

তবে ডিফার্ড একশন ফর চাইল্ডহুড এরিভালস 'ডাকা' ঠেকাতে ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান সামনে এনেছে মার্কিন শিশুদের স্বাস্থ্য বীমা চিলড্রেন'স হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রাম 'চিপ'। গত সেপ্টেম্বরে ফান্ড শেষ হয়ে যাওয়া শিশু বীমাটি সচল রাখতে আগামী ৬ বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে সরকারি দল। কিন্তু ডাকা'র বিষয়ে স্থায়ী সমাধান না হলে ব্যয় বরাদ্দের প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটরা কোনো সমর্থন দেবেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে সরকারি কর্মকাণ্ড চালু রাখতে স্বল্পস্থায়ী ব্যয় বরাদ্দের একটি বিল গত বৃহস্পতিবার রাতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে। সরকারের অচলাবস্থা ঠেকাতে নিম্নকক্ষ আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছে। তবে বিলটিকে এখন উচ্চকক্ষ সিনেটেও পাস হতে হবে। এই বিল পাস না হলে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকাণ্ড শুক্রবার মধ্যরাতের পর বন্ধ হয়ে যেত। এরআগে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দিনব্যাপী অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল।

চিলড্রেন'স হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রাম বা চিপ'র ওপর নির্ভর করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০ লাখ শিশুর স্বাস্থ্যসেবা। বীমা সুবিধাপ্রাপ্ত এসব শিশুর মধ্যে সাড়ে ৩ লাখই নিউইয়র্কের। ফেডারেলের চাহিদা ও নির্দেশনা মোতাবেক স্টেগুলোর দ্বারা পরিচালিত হয় শিশুদের এ স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচি। স্ট্রেটস ও ফেডারেল সরকার যৌথভাবে এতে অর্থায়ন করে। ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারে এই বীমার আওতায়।

প্রেসিডেন্ট বিলক্লিনটন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের শিশু ও অন্তসত্বা নারীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ১৯৯৭ সালে চিলড্রেন'স হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রাম বা চিপ চালু করেন। এরমাধ্যমে বীমাকৃত নারী ও শিশুদের কম্প্রিহেনসিভ সুবিধা প্রদান করা হয়। ফেডারেল নির্দেশনার আলোকে স্টেটগুলো নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে সাজাতে পারে এ কর্মসূচি। একারণে বিভিন্ন স্টেটে চিপ'র সুবিধার ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়।

স্টেটগুলো বীমা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে শিশুদের পরিবারের বার্ষিক আয়ের ভিত্তিতে মানদণ্ড তৈরি করে, যা বিভিন্ন স্টেটে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কলাম্বিয়ার ৪৬টি স্টেটস ও ডিস্ট্রিক্ট-এ ফেডারেল প্রোভার্টি লেভেল (এফপিএল)'র ২০০ শতাংশের ওপর পর্যন্ত এবং ২৪টিতে ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত আয়ের পরিবারের শিশুদের স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা প্রদান করে। তবে এফপিএল'র ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত এই মানদণ্ড নির্ধারণ করতে পারে স্টেট।

চিলড্রেন'স হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে সাধারণ সকল ধরণের মেডিকেল সুবিধা প্রদান করা হয়। আর্লি এন্ড পেরিয়ডিক স্ক্রিনিং, ডায়াগনিস্টিক, এন্ড ট্রিটমেন্ট বা ইপিএসডিটি সেবাও দেয়া হয় এই স্বাস্থ্য বীমায়। ইপিএসডিটি'র মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য ও দাঁতের সেবাও অন্তর্ভূক্ত।

চিপ- এ অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে স্টেটগুলো পছন্দমতো সীমিত ফি, প্রিমিয়াম, ডিডাক্টিবলস, কোইন্স্যুরেন্স এবং শিশু ও অন্তসত্বা নারীদের জন্য কোপেমেন্টস নির্ধারণ করতে পারে। যা সাধারণত বীমাবৃতের পরিবারের বার্ষিক আয়ের ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত। সুস্থ নবজাতক ও শিশুদের ডাক্তার দেখানোসহ কিছু ক্ষেত্রে খরচ ভাগাভাগি নিষিদ্ধ। মেডিকেইড কস্ট শেয়ারিং নীতিমালা মেনেই স্টেটগুলোকে বর্ধিত মেডিকেইড কর্মসূচি বাস্তবান করতে হয়।

এরআগে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বারাক ওবামা তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এনে দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা নীতি ও পদ্ধতিতে বীমা শিল্পের ব্যবহারের চমক দেখিয়ে আমেরিকানদের মন জয় করেন ওবামা। ক্ষমতায় এসে চালু করেন প্যাশেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (পিপিএসিএ), বা সংক্ষেপে অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (এসিএ)। যা পরিচিতি লাভ করে  ‘ওবামাকেয়ার’ নামে।

স্বাস্থ্যসেবা শিল্প পুনর্গঠন করতে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ওবামার দ্বারা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট আইনে পরিণত হয়। আর ২০১২ সালের ২৮ জুন সুপ্রীমকোট এটিকে স্বীকৃতি দেয়। ওবামাকেয়ারের উদ্দেশ্য হলো- সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত স্বাস্থ্যবীমায় আমেরিকানদের আরো প্রবেশাধিকার দেয়া এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচ কমানো।



No comments:

Post a Comment